
তরিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম কেন্দ্রস্থল মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে এক চক্র দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত রিয়াদ নামের এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আড়াল করে দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন দুঃসাহসিক অপরাধ কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণকাজ, দোকান বসানো এমনকি ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও রিয়াদ ও তার অনুসারীদের অনুমতি ছাড়া কিছুই করা যায় না। “বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না”—এই হুমকিতে বাধ্য হয়ে মালিক ও ঠিকাদাররা মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভবন মালিক বলেন,
“নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ চলবে না। এরপর রিয়াদ নিজে ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। চাঁদা না দিলে শ্রমিকদের মারধর, মালামাল নষ্ট করে দেবে বলে হুমকি দেয়।”
এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। বেশ কয়েকজন ভবন মালিক ও ঠিকাদার একই ধরনের ভয়ঙ্কর ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি ‘মিনি মাফিয়া’ চক্র, যারা নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে চলে হামলা, মামলা আর পুলিশি হয়রানি।
এক ঠিকাদার বলেন,
“এখন ভবন নির্মাণের সবচেয়ে বড় বাধা রিয়াদ। চাঁদা না দিলে শ্রমিক পালিয়ে যায়, মালামাল গায়েব হয়ে যায়, আবার থানায় গিয়ে দেখি আমাদের নামেই মামলা!”
স্থানীয়দের অভিযোগ, রিয়াদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ একাধিক মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা নিয়ে জনমনে বিরাজ করছে গভীর ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। তাছাড়া, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে রয়েছে একাধিক চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মামলা।
একজন ভুক্তভোগী বলেন,
“থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছি। অডিও, ভিডিও প্রমাণও দিয়েছি। কিন্তু কিছু হয়নি। বরং রিয়াদ অভিযোগ জানার পর চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”
রিয়াদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও অভিযোগ জানানো হলেও কেউ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত সহযোগী’ হিসেবে পরিচিত, যার কারণে তিনি প্রশাসনের চোখে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,
“আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি, শুধু অভিযোগ নয়, লিখিত প্রমাণসহ একাধিকবার পুলিশকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অনেকেই ভয় পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন, বা নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন।
সচেতন মহলের প্রশ্ন—আইনের শাসন যদি কেবল দুর্বল ও সাধারণ মানুষের জন্য হয়, তাহলে কি প্রভাবশালী অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে?
এখনই সময় দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার।
জনগণের দাবি, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে মিশনপাড়ার মতো নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য এলাকাও এমন চাঁদাবাজ চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে। সময় থাকতেই ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ অঘটন।